পরিস্থিতির অবনতি

মণিপুরে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনতে সরকার, নাগরিক সমাজের যৌথ উদ্যোগ প্রয়োজন

May 29, 2023 01:50 pm | Updated 01:50 pm IST

ফের একবার হিংসার আগুন জ্বলছে মণিপুরে। প্রায় তিন সপ্তাহ আগে রাজ্যটিতে প্রথমবার উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়। চূড়াচাঁদপুরে এবং বিশেষত ইম্ফলে সংঘর্ষের ঘটনায় অনেকের মৃত্যু হয়েছিল। ঘরছাড়া হতে হয়েছিল বহু মানুষকে। হাইকোর্টের একটি নির্দেশের বিরুদ্ধে গত ২৭ মার্চ বিক্ষোভ শুরু হয়। রাজ্যে তফশিলি জাতিদের তালিকায় মেইতেই কমিউনিটিকে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি তোলা হয়। তবে সময়ের সাথে সাথে এই বিক্ষোভ বিশাল আকার ধারণ করে। বিজেপি বিধায়ক সহ কুকি-জোমি কমিউনিটির প্রতিনিধিরা পৃথক প্রশাসনের দাবি করেন। পরিস্থিতি এতদূর পর্যন্ত গড়ানোর কথাই নয়। রাজ্যে আন্তঃকমিউনিটি সম্পর্কের মধ্যে মাঝে মধ্যে বিক্ষোভের আগুন জ্বলে উঠেছে এবং বছরের পর বছর ধরে তা নিয়ে একটা থমথমে পরিবেশ তৈরি করেছে। তবে মে মাসে যে গণ্ডগোল দেখা যায়, সেটির মাধ্যমে পাহাড় এবং উপত্যকার মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ও মেইতেই এবং কুকি-জোমি কমিউনিটিতে থাকা উগ্রপন্থী ও দুর্বৃত্তদের ছড়ানো হিংসা প্রতিরোধ করার ক্ষেত্রে রাজ্যের সম্পূর্ণ ব্যর্থতা প্রতিফলিত হয়েছে। বিশেষ করে নির্দিষ্ট কোনো কমিউনিটির বিরুদ্ধে পক্ষপাতমূলক অবস্থান না নিয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে এবং অসম্মতির বিষয়ে সরাসরি হস্তক্ষেপ না করতে এন. বীরেন সিং, বিজেপির মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন রাজ্য সরকারের অপারদর্শিতার ফলে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়। সরকারের তথাকথিত আফিম চাষ বিরোধী অভিযানকে পাহাড়ে বসবাসকারী কুকি-জোমি কমিউনিটির সদস্যদের বিরুদ্ধে একটি পদক্ষেপ হিসাবে বিবেচনা করা হয়। এটি থেকে প্রবল ক্ষোভ ছড়ায়। আগুনে ঘি ঢালার কাজ করেছে হাই কোর্টের সিঙ্গল জাজ বেঞ্চের একটি অযৌক্তিক নির্দেশ। খোদ ভারতের মুখ্য বিচারপতি ডি.ওয়াই চন্দ্রচূড় পর্যবেক্ষণ করে বলেছেন, নির্দেশটি ২৩ বছরের সাংবিধানিক বেঞ্চের রায় লঙ্ঘন করেছে। আর তাতেই পরিস্থিতি আরও শোচনীয় হয়ে ওঠে। চূড়াচাঁদপুরে ও ইম্ফলে হিংসা থামাতে সরকারের অক্ষমতা থেকে রাজ্যের বর্তমান শাসক গোষ্ঠীর অপারদর্শিতা ফুটে উঠেছে।

যেখানে হিংসার ঘটনা ঘটেছে, সেখানে আধা সামরিক বাহিনী এবং পুলিশের টহলদারি বৃদ্ধি করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য রাজ্য সরকারকে কেন্দ্রের সাহায্য নিতে হবে, নিজেদের কাজকর্মকে সুসংগঠিত করে তুলতে হবে। ঘরছাড়া লোকজনকে ত্রাণ দিতে হবে। উগ্রপন্থীদের প্রভাব কমাতে হবে। যারা ঘরছাড়া হয়েছেন, তাদেরকে বাড়ি ফেরানোর জন্য নিরাপত্তা বাহিনীর সাহায্য নিতে হবে। এটা করতে না পারলে গণ্ডগোল সৃষ্টিকারীদের কাঁধ আরও শক্ত হবে। দীর্ঘমেয়াদী ক্ষেত্রে এটি রাজ্যের অনেক ক্ষতি করতে পারে। তার কারণ এই গণ্ডগোল সৃষ্টিকারীরা বিচ্ছিন্নতাবাদ, অশান্তিতে সুড়সুড়ি দিচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকারও নীরব দর্শক হয়ে বসে থাকতে পারে না। উত্তর পূর্বের অন্য কিছু রাজ্যের মতো, মণিপুরেও নাগরিকদের মধ্যে নাগরিকতার বোধ জাগিয়ে তোলা প্রয়োজন। তাদের নিজেদের মধ্যে জাতিগত পরিচয়ের যে পার্থক্য আছে, তাদেরকে সেসবের উর্ধ্বে ওঠার ব্যবস্থা করে দিতে হবে। কমিউনিটির নেতৃত্ব এবং রাজ্য সরকারের প্রতিনিধিদের মধ্যে আস্থা টলমল করছে। এই পরিস্থিতিতে মণিপুরে আন্তঃকমিউনিটি সম্পর্কের বন্ধন স্বাভাবিক করে তুলতে এবং গণ্ডগোল সৃষ্টিকারী ও উগ্রপন্থীরা যাতে পরিস্থিতিকে কাজে লাগাতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে রাজ্যের মধ্যে এবং এর বাইরে থাকা নাগরিক সমাজকে সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে।

Top News Today

Comments

Comments have to be in English, and in full sentences. They cannot be abusive or personal. Please abide by our community guidelines for posting your comments.

We have migrated to a new commenting platform. If you are already a registered user of The Hindu and logged in, you may continue to engage with our articles. If you do not have an account please register and login to post comments. Users can access their older comments by logging into their accounts on Vuukle.