এই বছরের শেষের দিকে ভারতের কাছে একটি নতুন ‘সুপার কম্পিউটার’ অথবা আরও সঠিকভাবে বলতে গেলে, একটি আপগ্রেড করা ‘হাই পারফরমেন্স কম্পিউটিং (এইচপিসি)’ সিস্টেম থাকবে। এটি বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত কম্পিউটার সিস্টেম হতে পারে। আটোস নামে ফ্রান্সের একটি তথ্যপ্রযুক্তি পরিষেবা ও পরামর্শ প্রদানকারী সংস্থা এই সিস্টেম ইনস্টল করবে। ২০২৫ সালের মধ্যে ₹৪,৫০০ কোটি মূল্যের হাই-পারফরমেন্স কম্পিউটার সংগ্রহ করার দন্য ফ্রান্সের সাথে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল নরেন্দ্র মোদির ভারত। এই এইচপিসি সিস্টেমগুলো দুটি প্রতিষ্ঠানে চলবে। এগুলো হলো ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অব ট্রপিক্যাল মেটেরোলজি, পুণে এবং ন্যাশনাল সেন্টার ফর মিডিয়াম রেঞ্জ ওয়েদার ফরকাস্টিং, নয়ডা। এই জায়গাগুলোতে বর্তমানে ভারতের সবচেয়ে শক্তিশালী অনুরূপ মেশিন রয়েছে, যেগুলোর নাম মিহির এবং প্রত্যূষ। পূর্বসূরীদের মতো, আটোসের মেশিনগুলো মূলত সফিস্টিকেটেড ওয়েদার মডেল চালানোর কাজে ব্যবহার করা হবে। বেশ কিছু বছর ধরে এগুলোর মাধ্যমেই আবহাওয়ার পূর্বাভাস প্রস্তুত করা হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে দীর্ঘমেয়াদী বর্ষার আগাম তথ্য, পনেরো দিনের আবহাওয়ার পূর্বাভাস এবং দৈনিত আবহাওয়া সংক্রান্ত পরিবর্তন। এই সমস্ত কাজের জন্য অত্যন্ত শক্তিশালী মেশিন প্রয়োজন, তার কারণ বায়ুমণ্ডল এবং সমুদ্রের প্রকৃত অবস্থা সিমুলেট করার সক্ষমতার ভিত্তিতেই নির্ভূলভাবে আবওয়ার পূর্বাভাস দেওয়া হয়। সুপার কম্পিউটার একটা চর্চার বিষয় হয়ে উঠেছে এবং এই শব্দটির সাথে সবাই পরিচিত। দুই দশক আগের সুপার কম্পিউটার এখনকার শিক্ষার্থীদের ল্যাপটপ এবং গেমিং কনসোলের মধ্যে রয়েছে।
কম্পিউটিং, প্রোটিন বায়োলজি, এয়ারোস্পেস-মডেলিং অ্যাপ্লিকেশন এবং বর্তমানের AI-লিঙ্ক করা অ্যাপ্লিকেশন, এগুলোর ওপর অত্যন্ত নির্ভরশীল হওয়া আবহাওয়া সংক্রান্ত মডেলিং ছাড়া অনেক চ্যালেঞ্জিং গবেষণা সংক্রান্ত প্রশ্ন আছে। যে দেশগুলো প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রে নিজেদের অগ্রগতি প্রতিষ্ঠা করতে চায়, তারা একটি পন্থা হিসাবে এইচপিসি ব্যবহার করে। দুই দশকের বেশি সময় ধরে সেরা ৫০০ প্রজেক্টে সবচেয়ে শক্তিশালী ৫০০টি সেরা এইচপিসি মেশিন রয়েছে। এটি প্রত্যেক দুই বছর অন্তর আপডেট করা হয়। কোনো দেশ তালিকায় স্থান পেলে, তারা নিজেদের সিস্টেমের উপস্থিতির বিষয়টির প্রচার চালায়। বর্তমানে পুণের সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট অব অ্যাডভান্সড কম্পিউটিং (সিডিএসি)-এ থাকা একটি মেশিন হলো সেরা ১০০-তে থাকা একমাত্র ভারতীয় মেশিন, যেটির সর্বোচ্চ গতি হলো ১৩ পিটাফ্লপস। কম্পিউটার প্রসেসিং সামর্থ্যের একটি ইঙ্গিত প্রদানকারী একক হলো ফ্লোটিং পয়েন্ট অপারেশন পার সেকেন্ড (ফ্লপস) এবং ১ পিটাফ্লপস হলো ১,০০০ ট্রিলিয়ন ফ্লপস। যে ফরাসী মেশিনগুলো ইনস্টল করা হবে, সেগুলো ১৮ পিটাফ্লপসের হবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে এবং ভারতে ইতোমধ্যে পিটাফ্লপ রেঞ্জে একাধিক গবেষণামূলক প্রতিষ্ঠানে বেশ কিছু মেশিন আছে। আশার বিষয় হলো যে ভারতীয় বিজ্ঞানীরা নানা কঠিন সমস্যার সমাধান করার জন্য এই শক্তিশালী মেশিনগুলো কাজে লাগাতে পারবেন। তবে মৌলিক বিজ্ঞান বা বাণিজ্যিক প্রোডাক্ট তৈরির ক্ষেত্রে এই মেশিন কতটা সাহায্য করতে পারবে, সেটা দেখার বিষয়। ভারত যেমন ঠিক স্বল্পমেয়াদী আবহাওয়ার পূর্বাভাসের ক্ষেত্রে উন্নতি করেছে এবং অনুরূপ মেশিনগুলোর সৌজন্য সাইক্লোনের পূর্বাভাসকে আরও নির্ভুল করে তুলেছে, ঠিক তেমনি অন্যান্য ক্ষেত্রেও এগুলোর প্রয়োগ বা ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব আরোপ করতে হবে। শুধুমাত্র গতি এবং শক্তি নিয়ে আত্মতুষ্টিতে ভুগলে চলবে না।
COMMents
SHARE