১৪ মে থাইল্যান্ডে পার্লামেন্টারি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। রয়্যালিস্ট, মিলিটারি সমর্থিত সরকার এবং গণতন্ত্রপন্থী, সংস্কারপন্থী বিরোধীদের মধ্যে থেকে কাউকে বেছে নেওয়ার বিকল্প ছিল ভোটারদের সামনে। দেখা যাচ্ছে, তারা বিপুলভাবে শেষের দলটিকেই সমর্থন জানিয়েছেন। যখন প্রাথমিক ফলাফল ঘোষণা করা হয়, তখন দেখা যায়, ১৫২টি আসন নিয়ে একক সংখ্যাগরিষ্টতা অর্জন করেছে প্রগতিশীল মুভ ফরওয়ার্ড পার্টি। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী থাকসিন শিনাওয়াত্রার কন্যা পায়েটোঙ্গটার্ন শিনাওয়াত্রার নেতৃত্বাধীন আর একটি গণতন্ত্রপন্থী দল, ফিউ থাই পার্টি ১৪১ আসন সহ দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে। সরকারপন্থী বাকি সমস্ত দল ভালো ফল করতে পারেনি। মুভ ফরওয়ার্ড এবং ফিউ থাই, উভয় দলই সেনাবাহিনীর পাশে থাকার বার্তা দিয়েছে, যারা দেশের অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধান করার জন্য একটি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ২০১৪ সালে ক্ষমতা দখল করেছিল। ৪২ বছর বয়সী পিটা লিমজারোয়েনরাটের নেতৃত্বাধীন নয়া রাজনৈতিক দল দ্য মুভ ফরওয়ার্ড এখন জোট গড়ার জন্য অগ্রণী হয়ে কথাবার্তা চালাচ্ছে এবং পরবর্তী সরকার তৈরির দিকে পা বাড়াচ্ছে। ভোট প্রচারের সময় পিটা প্রতিষ্ঠান বিরোধীতার বার্তা দিয়েছেন এবং থাইল্যান্ডের ভোটারদেরকে একটি নয়া সূচনার আশা দেখিয়েছেন। দলের নির্বাচনী ইশতেহারে মিলিটারি কনস্ক্রিপশন বা বাধ্যতামূলকভাবে সেনায় যোগদান করানো বন্ধ করা, “সেনা অভ্যুত্থান চক্র” সমাপ্ত করা, ব্যবসায় একচেটিয়া কারবারের মোকাবিলা করা এবং সেনা-রচিত সংবিধান বাতিল করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া তারা বিতর্কিত ‘lèse majesté’ আইন সংশোধন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এই আইন অনুযায়ী, রাজতন্ত্রকে জনগণের সমালোচনার হাত থেকে রক্ষা করা হয়। মুভ ফরওয়ার্ড পার্টির প্রতিশ্রুতিগুলো জনগণের মনে দাগ কেটেছে। ক্রমশ শোচনীয় হতে থাকা অর্থনীতি এবং প্রধানমন্ত্রী প্রায়ুত চান-ও-চায়ের স্বৈরতন্ত্রের কারণে সেদেশের মানুষের মধ্যে প্রবল ক্ষোভ তৈরি হয়।
তবে নির্বাচনে জয়ী হওয়ার মানে এই নয় যে মুভ ফরওয়ার্ড পার্টি সহজে সরকার গঠন করতে পারবে। ৫০০ সদস্যের নির্বাচিত আইনসভাতে বিরোধী পক্ষের জোটের সংখ্যাগরিষ্ঠতা (৩০৯) আছে। তবে থাইল্যান্ডের দ্বিকক্ষবিশিষ্ট ৭৫০ সদস্যের পার্লামেন্টে (সেনেটের ২৫০ জন সদস্যকে সেনার তরফ থেকে নিয়োগ করা হয়) সরকার গঠন করার জন্য পিটার ৩৭৬ জন লেজিসলেটরের সমর্থন প্রয়োজন। তিনি সেনার সমালোচনা করেন। তিনি রাজপরিবারের মানহানি সংক্রান্ত আইনের সংশোধন করার আশ্বাস দিয়েছেন। এই কারণে সেনাকর্তারা তার উত্থান নিয়ে সতর্কতামূলক অবস্থান নিচ্ছেন। সেনেট যদি বিরোধী জোটের বিরুদ্ধে ভোট দেয়, তাহলে তিনি সরকার তৈরি করতে পারবেন না। এখন এবং ১৩ জুলাই, যখন নির্বাচন কমিশন অফিসিয়ালি ফলাফল অনুমোদন করবে, তার মাঝে কী হয়, সেটা দেখার বিষয়। ২০১৯ সালের নির্বাচনে মুভ ফরওয়ার্ড পার্টির পূর্বসূরী হিসাবে পরিচিত দ্য ফিউচার ফরওয়ার্ড পার্টি তৃতীয় বৃহত্তম দল হয়ে ওঠে, যা দেখে সেনা কর্মকর্তারা অবাক হয়েছিলেন। যদিও পরে দলটি অবলুপ্ত করা হয় এবং দলটির নেতাদেরকে রাজনীতি থেকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। ইতোমধ্যেই পিটার বিরুদ্ধে নির্বাচন আইন অমান্য করার অভিযোগ উঠেছে। ক্ষোভের আগুন ধিক ধিক করে জ্বলছে। এই অবস্থায় নির্বাচনে জয়ীদেরকে যদি সরকার গঠন করা থেকে বিরত করা হয়, তা পরিস্থিতি আরও ভয়ানক হয়ে উঠবে। ২০২০ সালে থাইল্যান্ডজুড়ে গণতন্ত্রপন্থী ব্যাপক আন্দোলন শুরু হয়, তৎকালীন সরকার কড়া হাতে সেগুলোর দমন করে। মুভ ফরওয়ার্ড পার্টিকে প্রায় 14 মিলিয়ন লোকজন ভোট গিয়েছেন। তাদের ভাগ্য যদি সেনা নির্ধারণ করে, তাহলে সমাজে আরও বেশি চিড় ধরবে। তাই সেনা কর্মকর্তাদের উচিত নির্বাচনটিকে ক্ষমতা দখল করার একটি সুযোগ হিসাবে দেখতে এবং বিজয়ীদেরকে পরবর্তী সরকার গঠন করতে দেওয়া।
COMMents
SHARE