দুনিয়া জুড়ে আর্থিক মন্দা চলছে। বিষয়টি নিয়ে যথেষ্ট উদ্বেগ রয়েছে। এরই মধ্যে বিশ্বের বৃহত্তম অপরিশোধীত তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর সংগঠন ওপেক+ গত রবিবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ২০২৪ সালেরও তারা উৎপাদনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় হ্রাস বজায় রাখতে চায়। তার কারণ তারা চাইছে না তেলের দাম কমে যাক। ওপেক মেজর এবং অগ্রণী উৎপাদনকারী সৌদি আরব জুলাই মাসে নিজেদের আউটপুট দিন প্রতি ১ মিলিয়ন ব্যারেল (বিপিডি) হিসাবে কমানোর ব্যাপারে বদ্ধপরিকর। এর জেরে সোমবার আন্তর্জাতিক তেলের ভবিষ্যতের চুক্তিগুলো বেড়েছে। ২০টি দেশের সংগঠন ওপেক+ ক্রমহ্রাসমান চাহিদার মুখে তেলের দাম স্থির রাখার জন্য সরবরাহ কমাতে উদ্যোগী হয়েছে। গত এপ্রিলে সবাইকে অবাক করে দিয়ে তারা অতিরিক্ত আউটপুট হ্রাসের কথা ঘোষণা করে, যা ছিল ১.৬৬ মিলিয়ন বিপিডি। যদিও দামের ওপর এই পদক্ষেপের প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। এপ্রিলে হঠাৎ করে হ্রাস করার সিদ্ধান্তের পর কিছু সময়ের জন্য ৮৭ ডলারের ওপরে ওঠার পর বেঞ্চমার্ক ব্রেন্ট ক্রুডের ভবিষ্যৎ মোটামুটি ব্যারেল প্রতি ৮০ ডলারের মধ্যে থেকেছে। ভারতকে নিজেদের ৮০% অপরিশোধীত তেল আমদানি করতে হয়। এই প্রেক্ষিতে দাঁড়িয়ে, সৌদি এবং ওপেক+ সংগঠনের ঘটনা আমাদের দেশের জন্য বেশ উদ্বেগের বিষয়। তেল উৎপাদনকারী দেশগুলো তেলের দাম বাড়াতে চাইছে। মস্কো ইউক্রেন আক্রমণ করার পর থেকে রাশিয়া থেকে তেল আমদানির পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়েছে ভারত। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর পশ্চিমের অনেক দেশ রাশিয়ার এনার্জি সংক্রান্ত প্রোডাক্ট রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এই অবস্থায় রাশিয়া থেকে আমদানি করা তেলের ব্যারেল প্রতি ভারত ক্রমহ্রাসমান মূল্য প্রদান করে চলেছে।
গত সপ্তাহের শেষদিনের হিসাব অনুযায়ী, ২০২২ সালের জুন মাসে ব্যারেল প্রতি ভারত যেখানে ১১৬.০১ ডলার খরচ করত, এখন সেটা কমে দাঁড়িয়েছে ব্যারেল প্রতি ৭২.৩৯ ডলার, যা ৩৮% হ্রাস। ওপেক+ সংগঠনটির সর্বশেষ পদক্ষেপের ফলে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে তেলের দাম বাড়ার একটা সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। তবে ভারতে সরাসরি এর প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা কম। নিষেধাজ্ঞায় জেরবার রাশিয়া থেকে গত মার্চ মাসে ভারত নিজেদের মোট তেলের চাহিদার এক তৃতীয়াংশ আমদানি করেছে। রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করা বৃদ্ধি করার ফলে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে তেলের দাম বৃদ্ধির প্রভাব থেকে ভারত নিজেকে আড়াল করতে পারবে। তবে অপরিশোধীত তেলের মূল্য হ্রাসের সুফল ভারতীয় গ্রাহকদের কাছে পৌঁছায়নি। ২০২২ সালের ২২ মে থেকে পাম্পে পেট্রোল এবং ডিজেলের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। ভবিষ্যতে যাতে দাম বৃদ্ধি পেলে রোজগারে তার প্রভাব না পড়ে, তার জন্য কেন্দ্র, রাজ্য এবং অয়েল মার্কেটিং সংস্থাগুলো দাম পরিবর্তন করতে অনিচ্ছুক। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে খুচরা মুদ্রাস্ফীতিতে নিম্নমুখী ট্রেন্ড দেখা গিয়েছে। গ্রাহকদের ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধির সূচক ওপরের দিকে যাচ্ছে না। এই সামগ্রিক পরিস্থিতিতে, তেলের দাম নিয়ে নীতি নির্ধারণকারীদেরকে ফের একবার মূল্যায়ন করতে হবে। তেলের দামকে যুক্তিযুক্ত করে তোলার জন্য এটিকে জিএসটির অধীনে আনার যে দাবি উঠেছে, মনে হয়না নিকট ভবিষ্যতে তা পূরণ করা হবে। কারণ এই পদক্ষেপের সাথে কেন্দ্র ও রাজ্যের রোজগার জড়িয়ে আছে। তবে পরিবহন ক্ষেত্রে ব্যবহার করা তেলের ওপরে কেন্দ্র নিজেদের লেভি হ্রাস করে অর্থনীতিকে আরও মজবুত করার একটা পদক্ষেপ নিতে পারে।
COMMents
SHARE