সংঘর্ষে জড়াল তিন তিনটি ট্রেন। গত ২ জুন ওডিশার বালাসোরে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটেছে। ভারতের রেল পরিষেবাকে আধুনিক করে তোলা এবং এর বিস্তার ঘটানোর ক্ষেত্রে যে চ্যালেঞ্জ রয়েছে, এই ঘটনার মাধ্যমে তা ফের একবার প্রমাণিত হলো। শালিমার-চেন্নাই করমণ্ডল এক্সপ্রেস, যশবন্তপুর-হাওড়া এক্সপ্রেস এবং একটি মালগাড়ির সংঘর্ষে কমপক্ষে ২৭৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহতের সংখ্যা ৯০০-এরও বেশি। গত দুই দশকের মধ্যে এটিই সবচেয়ে বড় ট্রেন দুর্ঘটনা। তবে সম্প্রতি এই ধরনের একটি দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব হয়েছিল। এই বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের কথা। রেলের মাইসোর ডিভিশনের বীরুর-চিকজাজুর সেকশনের মধ্যে থাকা হোসাদুর্গা রোড স্টেশনে দুটি ট্রেনের মধ্যে সংঘর্ষ এড়ানো সম্ভব হয়েছিল। সৌজন্যে লোকো পাইলটের সতর্কতা এবং ট্রেনের ধীর গতি। যার ফলে ট্রেনটি থামানো সম্ভব হয়েছিল। ট্রেনটি নিজের নির্দিষ্ট ট্র্যাকের বাইরে চলে যায়। ত্রুটিপূর্ণ সিগনালিং সিস্টেম এবং মানুষের বিপজ্জনক হস্তক্ষেপের দরুন এটি ঘটে। সেই দুর্ঘটনার অফিসিয়াল রেকর্ডে বলা হয়, অবিলম্বে সিস্টেমে থাকা ত্রুটির সংশোধন করা প্রয়োজন। এছাড়া কর্মীদেরকে সতর্ক করে দিতে হবে, তারা যেন কোনো শর্টকাট ব্যবহার করার চেষ্টা না করেন। বালাসোরের ঘটনার প্রাথমিক রিপোর্ট বলছে, সেখানে ঠিক একই জিনিস ঘটেছে। প্রথমে মেকানিক্যাল ত্রুটি এবং তারপর মানব ত্রুটি ঘটে। এরই মারাত্মক পরিণাম এই দুর্ঘটনা।
ভারতীয় ট্রেন এখন প্রতিদিন ১৫ মিলিয়ন যাত্রী পরিবহন করে। যদিও কোভিড-১৯ মহামারির আগে এই সংখ্যাটা ছিল প্রতিদিন ২৩ মিলিয়ন। ২০২৩-২৪ বর্ষে ভারতের রেল পরিকাঠামো উন্নত করার একটি বিশাল পরিকল্পনা রয়েছে। এই কাজের জন্য ২.৪ লক্ষ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। গত দশকে প্রতি মিলিয়ন ট্রেন কিলোমিটার প্রতি দুর্ঘটনার সংখ্যা কমেছে। তবে ট্র্যাক রক্ষণাবেক্ষণে শোচনীয় ব্যর্থতা এবং রোলিং স্টক ও কর্মী সংকটের ফলে রেলকে আরও আধুনিক করে তোলার প্রচেষ্টা বার বার ধাক্কা খাচ্ছে। অ্যান্টি-কোলিশন সিস্টেমের সহ নানা নিরাপত্তামূলক পদক্ষেপ বাড়ানো হচ্ছে। তবে সেটা প্রত্যাশিত গতিতে হচ্ছে না। ২০২১ সালে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন, পরবর্তী ৭৫ সপ্তাহ জুড়ে বন্দে ভারত নামের ৭৫টি সেমি-হাই স্পিড ট্রেন চালু করা হবে। সেই অনুযায়ী ইতোমধ্যে অনেকগুলোর চাকাও গড়াতে শুরু করেছে। যাত্রী সুবিধা সংক্রান্ত ব্যাপারেও নজর দেওয়া হচ্ছে। তবে নিরাপত্তার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ আর কিছু হতে পারে না। বালাসোরের দুর্ঘটনার পর, ভারতের রেল উন্নয়নকে সঠিক ট্র্যাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য আর অপেক্ষা করা উচিত হবে না। গতি প্রয়োজন। তবে তার থেকেও বেশি প্রয়োজন নিরাপত্তা। বালাসোরের দুর্ঘটনার পিছনে অন্তর্ঘাতের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। সেন্ট্রাল ব্যুরে অব ইনভেস্টিগেশন এর তদন্ত করবে। তবে অপারেশনাল এবং প্ল্যানিং স্তরে রেলের তরফ থেকে কী কী নতুন বা সংশোধনীমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হয়, সেটা আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে। রেলকে আরও আধুনিক করে তুলতে এবং অগ্রাধিকারগুলোকে যথাযথভাবে নির্ধারণ করার জন্য প্রয়োজনীয় রিসোর্স খুঁজে পেতে হবে।
COMMents
SHARE